Anusaran by Aniruddha Bose


by Aniruddha Bose
Murder Thriller (Translation), Bengali
Hardbound, 288 Pages, 350 gms
About: Anusaran, Aniruddha, Bose, International, Thriller, Geo-economics, Politics, Sex, Conspiracy, Buddhism, Nimrod, Racy, Hinduism, Adrenaline, Truth, Realisation
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই, বিশেষ করে গত দু-তিন দশকে আমাদের জীবনযাত্রার ধরন যেমন বদলেছে, তার সঙ্গে তাল রেখে চেহারা বদলেছে পৃথিবীর অন্ধকার জগতেরও। সেই নিরিখে স্বভাবতই পিছিয়ে নেই আমাদের দেশও। চলতি থ্রিলার উপন্যাসে এই অন্ধকার জগতকে তুলে ধরা যে অসম্ভব, মোটামুটি বিশ শতকের শেষ পর্ব ঘনিয়ে আসার কালপর্ব থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। স্বভাবতই ধরন বদলাচ্ছিল এরকম লেখালেখিরও। কিন্তু তখনো আমাদের দেশে এ রকম লেখাপত্রের দেখা প্রায় মিলত না। বদলে, দেখা যেত প্রাইভেট ডিটেকটিভদেরই রমরমা, যা এখনও বাংলা রহস্য সাহিত্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এ ধরনের উপন্যাস-গল্পে অপরাধের চেহারা প্রধানত ঘোরাফেরা করত মধ্যবিত্ত ঘেরাটোপে দেশের মধ্যেই। গত এক-দেড় দশকে যদিও সেই চেহারাটা খানিকটা বদলাচ্ছে, কিন্তু সমাজের ওপরতলায় অপরাধের চেহারা যতটা বদলেছে তার সঙ্গে বাংলা সাহিত্য সমানভাবে তাল রাখতে পারেনি। তাই এধরনের উপন্যাস-গল্পে কপোল কল্পনার ছাপ প্রকট। কখনো কখনো গল্পের গরুকে গাছে তোলার চেষ্টায় লেখার মান যে হানি হয়নি, তা-ও নয়।
অনিরুদ্ধ বসুর লেখালেখি ও ভাবনাচিন্তার মূল বৈশিষ্ট্য এই বদলে যাওয়া সময়েরই ভেতরের চেহারাটা। তিনি কলম ধরেন তাঁর পেশার মতো, সময়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কাটাছেঁড়া করাতে। এই বদলে যাওয়া সময়ের ভেতরের টালমাটাল চেহারাটা পাঠকের সামনে তুলে ধরতে। সাহিত্য তাঁর কাছে নিছক অবসর বিনোদন নয়। বদলে যাওয়া একবিংশ শতাব্দীর চিন্তাধারা ও প্রকাশে পাঠককে বর্তমানের মুখোমুখি দাঁড় করাতে, আধুনিক ভাষাশৈলী, চিন্তাধারার ভাণ্ডার নিয়ে।
অন্যান্য লেখাপত্রের পাশাপাশি থ্রিলারধর্মী লেখাতেও পাঠককে স্রেফ রোমাঞ্চ উপহার দিয়েই কর্তব্য সমাধান মনে করেন না। বরং চান বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে আজকের রুঢ় বাস্তবকে তুলে ধরতে। তাই তার প্রথম উপন্যাস ‘চক্র' তে কল্পনার ডিটেকটিভকে পেছনে ফেলে একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে, প্রচলিত দেশি ও বিদেশি প্রথার বেড়া ভেঙেছেন। চিরাচরিত কল্পনার ডিটেকটিভকে বাদ দিয়ে এ যুগের বাস্তবধর্মী নতুন চিন্তাধারার বিন্যাস। পাঠক খুনির সঙ্গে ডিটেকটিভকেও খুঁজছে। এই বিকল্প চিন্তাধার প্রকাশ ‘কনড্রাম' ‘প্রহেলিকা' ‘ইটারন্যাল মেহেম’ ‘ইফ…', মার্ডার@করোনা.টাইম’ প্রভৃতি উপন্যাসে।
অনুসরণ লেখার পটভূমি আজকের ভারত শুধু নয়, গোটা বিশ্ব। এ-লেখায় এক... দুই...তিন... চার… করে একের পর খুন। শুধু ভারতে নয়, তার গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আপাত কারণহীন খুনেগুলোর জট খুলতে কেবল পুলিসই নয়, র সহ বিভিন্ন দেশের সরকারি অনুসন্ধানী সংস্থা জড়িয়ে পড়েছে উপন্যাসের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে। সঙ্গে মানুষের সীমাহীন লোভ। সেই লোভের জালে জড়িয়ে পাক খেয়েছে বিভিন্ন দেশের মানুষ। শেষে সমস্ত সুতোর জটই যে খুলেছে তাই নয়, উন্মোচিত হয়েছে কাল নির্বিশেষে মানবিক অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতও।
পাঠকের জন্যে লেখক থ্রিলারের আবহে তুলে এনেছেন মানব জীবনের চিরায়ত প্রশ্ন, যার উত্তরে নিহিত মনুষ্যজীবনের অনুসন্ধানের ইতিবৃত্ত। যে সত্য পার্থিব হিসেবের বাইরে।
আন্তর্জাতিক পটভূমিতে ধীরে ধীরে জমে ওঠা এই থ্রিলারের বঙ্গানুবাদ একুশ শতকের বাংলা রোমাঞ্চ সাহিত্যে অন্য মাত্রা যোগ করবে। এ লেখার বিন্যাসে সেই আবহমানতার ইঙ্গিত যা ব্যতীত সাহিত্যকীর্তির সাময়িকতার সীমানা পেরোনো অসম্ভব।
ফেব্রুয়ারি ২০২১ পার্থ মুখোপাধ্যায়
Publications of Aniruddha Bose:
Reviews
Anusaran Launch
-by You Tube | 25-Jul-2021
রহস্য, বিশেষ করে গোয়েন্দা কাহিনী ভিত্তিক গল্প উপন্যাস সাহিত্যের আঙিনার অন্যতম উপাদান। কোনো পাঠকই এর আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেন না। সুদীর্ঘকাল ধরে সারা পৃথিবীর অগণিত লেখক জন্ম দিয়ে চলেছেন অসংখ্য রহস্য গল্পের। গল্পগুলির প্রায় প্রতিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকে একজন গোয়েন্দা, যার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তীক্ষ্ণ, ঘটনার বিশ্লেষণ ক্ষুরধার, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরস্ত্র, কিন্তু যে-কোনো এনকাউন্টারে জয় অবশ্যম্ভাবী। আর থাকেন একজন সহকারী, যিনি তদন্ত-প্রক্রিয়ার প্রায় কিছুই বুঝতে পারেন না। গোয়েন্দা মহাশয়কে প্রশ্ন করলেও পান কেবল রহস্য-জনক উত্তর। সহকারীর কাজ কেবলমাত্র গোয়েন্দাকে সঙ্গ দেওয়া, ঘটনার নোট রাখা আর গল্পাকারে সেটি পাঠকের কাছে পরিবেশন করা। প্রায় সমস্ত গল্পের শেষে থাকে একটি ঘরোয়া জমায়েত – যেখানে গোয়েন্দাপ্রবর রহস্য-উন্মোচনের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণটি সকলের সামনে ব্যাখ্যা করবেন এবং সন্দেহভাজক ব্যক্তিটিকে (তিনি অবশ্যই সেখানে উপস্থিত থাকবেন ) পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু আইনি-প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তের শাস্তি হল কিনা, গোয়েন্দার তথ্য-প্রমাণগুলি আদালতে গ্রাহ্য হল কিনা ইত্যাদির কোনো খবরই আর পাওয়া যায় না। অর্থাৎ অপরাধের কাহিনীটি অর্ধসমাপ্তই থেকে যায়, থেকে যায় পাঠকের মনের অতৃপ্তি আর অবিশ্বাস।
প্লাস্টিক সার্জেন বন্ধু ডা. অনিরুদ্ধ বসু যেদিন তার সদ্য প্রকাশিত রহস্য উপন্যাস ‘অনুসরণ’টি আমাকে উপহার দিলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম এটিও হয়ত একই গতানুগতিক ফর্মুলায় লেখা। বলতে দ্বিধা নেই, একটু অবহেলা করেই শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম দু’চার পাতা পড়বার পরে আর এগোনোর উৎসাহ থাকবে না। কিন্তু প্রথম চ্যাপ্টারের মাঝামাঝি এসেই এমন একটা ঘোর লেগে গেল যে ২৮৭ পাতার বইটা সাড়ে চার ঘণ্টায় শেষ করে তবেই ছাড়া পেলাম।
না, এই গল্পে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা সম্পন্ন কোনো গেয়েন্দা নেই, নেই কোনো লেজুড় সহকারীও। রয়েছে পর পর কয়েকটি খুন, যার একটার সঙ্গে আর একটির আপাত সম্পর্ক আবিষ্কারের চেষ্টায় পাঠকের ভাবনা প্রথম থেকেই সচেতন, কিন্তু তার হদিশ পাওয়া যাবে না অন্তিম পর্যায়ে না এসে। রয়েছে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ জানবার টানটান উত্তেজনা। বিশ্বব্যাপী সমস্যায় জর্জরিত কয়েকটি দেশ একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় মানবিক বোধবুদ্ধি হারিয়ে ধ্বংসলীলায় মাতোয়ারা। এলেনা, আত্রেয়ী, জেসিকা, জিয়া, দীপাঞ্জন, রিয়া ইত্যাদি চরিত্রগুলি ঘটনার সামনের সারিতে থাকলেও ওরা আসলে মার্ক, আলঘানিম, ডেভিড, রেইনর ইত্যাদি কয়েকটি রাঘববোয়ালের হাতের পুতুল। এদের সর্বগ্রাসী লোভ, উচ্চাকাংখা আর পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস একে অপরকে নরকের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এরা প্রত্যেকে চেয়েছে নিজের নিজের দেশকে পৃথিবীর দরবারে এক নম্বর জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে। এজন্য তারা অন্য দেশগুলির প্রাকৃতিক সম্পদকে নির্বিচারে ধ্বংস করতেও পিছপা হয়নি। যায় মূল্য চোকাতে হয়েছে অসংখ্য মৃত্যুর বিনিময়ে।
এই বিক্ষুব্ধ সময়ে শান্তির বাণী শুনিয়েছেন সিকিমের নির্জন প্রান্তরের এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী পাঞ্চেত। তিনিই জানিয়েছেন মানুষের অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত সত্যটিকে, বলেছেন অহিংসা আর শান্তিই মানবজীবনের উত্তরণের একমাত্র পন্থা। বলেছেন মানবতাকে সম্মানে করতে। প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়েছেন প্রকৃতিকে অবমাননা করলে, তার ভারসাম্যকে অন্যায়ভাবে আঘাত করলে প্রকৃতি সুদে-আসলে প্রতিশোধ নিয়ে থাকেন। অনিরুদ্ধ বসুর অনুসরণ উপন্যাস একটি মামুলি রহস্য-গল্প নয়, এর পরতে পরতে পাওয়া যাবে অন্তরের আসল সত্ত্বার সন্ধান, যা একান্ত নিজেরই।
-by Dr Purnendu Bikash Sarkar | 14-Sep-2021
Comments