Dekha (Third Edition) by Aniruddha Bose


by Aniruddha Bose
Fiction, Bengali
Hardbound, 240 Pages, 320 gms
About: Dekha, Aniruddha, Bose, Smriti, Publishers, motherhood, heritage, India, culture, western, vision
প্রথম প্রকাশের ভূমিকা
অনিরুদ্ধ বসুর তৃতীয় উপন্যাস “দেখা”-র ভূমিকা লিখতে বসে কয়েকটা কথা মনে হল। মান আর হুঁশ ... এ দুই নিয়ে মানুষ। এ কথা অনেক শোনা। কিন্তু কি সত্যিই কখনো আমরা এ দুটো জিনিসের খোঁজ করি?
অনিরুদ্ধর এই ছোট উপন্যাসটি পড়ার পরে, অন্তত আমার একটা কথা মনে হচ্ছে যে, অনিরুদ্ধ ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, এই লিরিক্যাল কাহিনিটিতে এই দুটি জিনিসেরই খোঁজ করে গেছে। মানুষের জীবনের অনেকগুলো মূল প্রশ্ন উঠে এসেছে এই উপন্যাসটিতে। পিতা কে? পিতৃস্নেহ কী এবং কেন? সন্তান স্নেহের আসল রূপটি কী? মা কাকে বলে? মাতৃত্ব কি অর্জন করা যায়? নাকি তা নিতান্তই এক জান্তব এবং জেনেটিক ব্যাপার মাত্র। জীবন আসলে কী এবং সবার উপরে এই জীবন নিয়ে কী করব?
এই বেসিক প্রশ্নগুলির উত্তর না খুঁজে পেলে আমাদের ‘হুঁস’ হবে না। আর হুঁস না হলে ‘মান’-ও আসবে না।
অনিরুদ্ধ এক আপাত সরল কাহিনির মধ্যে দিয়ে চিন্তাশীল পাঠককে জীবন সম্পর্কিত অনেকগুলি মৌলিক প্রশ্নর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, এটাই এক সংবেদনশীল লেখক হিসেবে ওর কৃতিত্ব।
অনিরুদ্ধর এই উপন্যাসটির নাম ‘দেখা’। ছোট্ট নাম, কিন্তু তাৎপর্য গভীর। দেখা শব্দটির পেছনে তিনটি ফ্যাকটর আছে। দ্রষ্টা, দৃশ্য এবং পর্যবেক্ষণ। কে দ্রষ্টা? যে দেখছে। এখানে কে দেখছে? শ্রাবস্তি, অরিজিৎ না মঞ্জরী? নাকি পাঠক? নাকি মহাকাল? দৃশ্যটাই বা কী? কী দেখছে ওরা? পশ্চিম দেখছে পুবের জাগতিক দৈন্যের পিছনের এক বিশাল বিরাট ঐতিহ্যকে। নাকি পুব দেখছে পশ্চিমের বৈভবের আড়ালের এক অনন্ত দৈন্যের হাহাকারকে? কী ভাবে দেখছে? অণুবীক্ষণে না দূরবীক্ষণে? নাকি বিহঙ্গদৃষ্টিতে?
এক আপাত সারল্যের আড়ালে, অনিরুদ্ধ এই জটিল প্রশ্নগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে। ‘বুঝ জন যে জান সন্ধান’ আর যদি সত্যিই মননশীল পাঠক এই প্রশ্নগুলির জবাব খুঁজে পান, তবে সেটাই হবে তাঁর আসল দেখা... মান আর হুঁশকে দেখা। জীবনকে দেখা। জীবনের আসল ‘দেখা’ কে দেখা।
আজ অনিরুদ্ধর এই তৃতীয় উপন্যাসটির ভূমিকা লিখতে বসে মনে হচ্ছে, খ্যাতিমান এই শল্যচিকিৎসক আরও আগে কলম ধরলে বোধহয় বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণালি ভাণ্ডার অনেক বেশি সমৃদ্ধ হত।
অলমিতি।
দুর্গাপুর জুন ২০০৯ আশিস কুমার চট্টোপাধ্যায়
দ্বিতীয় প্রকাশের ভূমিকা
হয়ত অন্ধকারের পেছনেই দিয়া জ্বলে। ব্যথার নিভৃত আকাশে ফুটে ওঠে অরেকটা প্রেরণার অনুরণন। হয়ত বা ক্ষণস্থায়ী দুঃখকে বরণ করে নিতে হয় নতুন চেতনার আলোকে। যখন সৃষ্টি করাঘাত করে বিকিকিনির পৃথিবীতে। মনে হয় সব মিথ্যে। কেনই না লিখছি? কী হবে একান্ত মনের কথা নিবদ্ধ করে?
তাই দ্বিতীয় প্রকাশের ভূমিকা লিখতে বসে চোখে জল এসে গেছে। অনেক চোখের জল ফেলেছি প্রথম প্রকাশের পরে।
যে একদিন সাহিত্যকে বেছে নিয়েছিল তার নতুন চেতনার স্ফুলিঙ্গ হিসেবে, সে আজকে কেন লিখছে “কেনই বা লিখতে গেলাম?” সে কি অর্বাচীন কিছু প্রকাশকের ধৃষ্টতার স্বীকার হয়ে?
প্রথম প্রকাশ সাড়া জাগিয়েছিল বিদগ্ধ মহলে। প্রত্যেক মানুষের অন্তরের চেতনায়। দুর্ভাগ্যবশত তা পৌঁছতে পারেনি জনসমক্ষে। কেন? অনেক প্রশ্নের উত্তর অপ্রকাশিতই থেকে যায়। তার কাহিনি কোনওদিন লিখব যদি বা ইচ্ছে হয়। এখন আমি নিঃশব্দ নাবিক। লিখে যাই আমার মনের ভাষা নীরবে অন্তহীন। উদাস মন, নিজেকে খোঁজে সর্বক্ষণ।
লিখি আমার মনের ছন্দে।
ভালো কী মন্দ ফুটবে আপনাদের পাওয়া না-পাওয়ার আনন্দে।
কলকাতা, জানুয়ারি ২০১০ অনিরুদ্ধ বসু
তৃতীয় প্রকাশের ভূমিকা
‘দেখা’ অনেক দিক দিয়েই আমার সাহিত্য জীবনের মাইলস্টোন।
এই উপন্যাসে রাবীন্দ্রিক ছোঁয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে, একবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারে নতুন রূপে পদার্পণ। নতুন আঙ্গিকে, আজকের কথোপকথন ইংরেজি-বাংলা মেশানো রচনাশৈলী নিয়ে। হয়ত বাংলা ভাষার বিবর্তনে আগামীর দিশা। রবীন্দ্রোত্তর যে লেখা প্রকাশিত হয়েছে, সবই একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে। সরাসরি গল্প বলা। দেখার জাম্পকাট স্টাইল অন্যান্য সাহিত্যের থেকে ভিন্ন। বিদেশে থাকা, শ্রাবস্তির ইটোনিয়ান অ্যাক্সেন্ট দেশে কাটানোর পর কীভাবে বাংলা ভাষায় বিবর্তিত হল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বাংলা সাহিত্যর প্রগতিতে ধ্রুবতারা।
প্রকাশনা জগতের অপকীর্তি, এই উপন্যাস, লেখালেখির সঙ্গে আমায় প্রকাশনার দুনিয়ায় আনে। প্রকাশকের গতের চিন্তাধারা ও খামখেয়ালিপানা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের প্রকাশনা স্মৃতি পাবলিশার্সের স্থাপন, বিন্যাস ও বিস্তার।
বারবার বেস্টসেলারই হয়নি, এখন পর্যন্ত আমার যত প্রকাশিত উপন্যাস, সর্বাধিক বিক্রিত ও আদৃত। বহুবার অনুমতি ছাড়া গল্পটিকে টুকতে গিয়ে বাংলা ছায়াচিত্র জগৎও বেকায়দায় পড়ে। রিলিজ আটকে অবশেষে আমার গল্প অনুকরণ বন্ধ করেছে। তাতেই প্রমাণ এই উপন্যাসের নিজস্বতা।
উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশ উদ্বোধন হয়, মায়ের হাতে, আমার জন্মদিন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯, গোর্কি সদনে। তাঁকে উৎসর্গ করা বলেই তাঁর আশীর্বাদ এই বইটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। সব বাধা বিঘ্ন কাটাতে সহায়ক হয়েছে। এই উপন্যাসের হাত ধরেই আমার ইংরেজি সাহিত্যে পদার্পণ। দেখার ভাবানুবাদ The Vision দিয়ে ইংরেজি সাহিত্য যাত্রা শুরু।
আজকের যুগ-দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তব কাহিনির মধ্যে দিয়ে দেখতে চেষ্টা করেছি শাশ্বত দ্বন্দ্ব ও সত্যকে। মানুষের চিরন্তন চাওয়া-পাওয়া, যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্ন। ফলে দু’প্রান্তে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, সমগ্র যাপনচিত্রটাই মানুষের মধ্যে বিশাল তফাত গড়ে দেয়। সেখানেও কোথাও-বা মিলনের আর্তিটুকু রয়ে যায়। যা অনেকটা সাগরের সঙ্গে আকাশের মিলনে ব্যবধানরেখার বিস্তারের সঙ্গে তুলনীয়। দৃশ্যমান অথচ অগম্য। নিঃসঙ্গতার ফাঁক পূরণ করাটা ইদানীং সর্বত্র বহুজনের কাছেই যথেষ্ট কষ্টকর। যে ধারণাটা ক্রমশ চারদিকেই প্রকট হয়ে উঠছে। কাহিনির বিস্তারে চরিত্রগুলোর অবস্থান, তাদের একাকিত্ব বা সংঘবদ্ধ বিচরণ ক্ষণস্থায়ী না কি চিরস্থায়ী সেই সিদ্ধান্ত পাঠকের। যুগের বিবর্তনে তা কতটা ছাপ রেখে যাবে, সময়ই বলে দেবে।
কালকের সাহিত্যকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্মৃতি পাবলিশার্স প্রকাশনাকে ধন্যবাদ। আর আমার স্ত্রী স্মৃতি বসুকে, যার ধৈর্য, সহায়তা ও উৎসাহ না থাকলে আমার চর্চা বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হত না।
কলকাতা, মে ২০১৭ অনিরুদ্ধ বসু
Publications of Aniruddha Bose:
Reviews
Dekha : An Audiovisual Journey
-by You Tube
অনিরুদ্ধ বসুর দুটি উপন্যাস – দেখা ও তোমাকে সম্বন্ধে কিছু কথা
অনিরুদ্ধ বসুর দুটি বই খুব সদ্য পড়লাম – দেখা আর তোমাকে। অত্যন্ত সুলিখিত, সুখপাঠ্য রচনা। ঝরঝরে ভাষা, কাহিনি বিন্যাস পাঠকের আগ্রহ শেষ পৃষ্ঠার দিকে এগোনর জন্য আবিষ্ট করে রাখে।
দেখা গল্পটিতে চারটি প্রধান চরিত্র। রঞ্জিতা আর অরিজিতের বিয়ে ভেঙে গেছে। রঞ্জিতা অরিজিতের দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত মানতে পারে না – পাশ্চাত্যের চাকচিক্য, উচ্চাসনপূরণের অবাদ সুযোগ এবং সর্বোপরি সামাজিক পিরামিডে উপরে থাকার এমন ব্যবস্থা ছেড়ে, একমাত্র সন্তান স্রাবস্তিকে অনিশ্চয়তার পথে ছাড়তে রাজি নয় রঞ্জিতা। সে মেয়েকে মনেপ্রাণে বিশ্বনাগরিক বানাতে চায়, দিতে চায় সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা। ভারতবর্ষের তৃতীয় মানসিকতা, এ দেশের হতশ্রী ব্যবস্থাপনা থেকে অনেক দূরে রাখা হয়েছে স্রাবস্তিকে। এমনকি বাবা অরিজিতকেও সে চেনে না। স্রাবস্তি শুধু জানে Arijit had deserted her and her mom. স্রাবস্তি বাবাকে চিনল অনেক বড় হয়ে, ব্যক্তিগত জীবনে একটা বড় ধাক্কা খেয়ে। যা তাকে বাধ্য করল ভারত অনুসন্ধানে, নিজের বাবাকে চেনাতে। কলকাতায় এসে পরিচিত হল বাবার বান্ধবীর সাথে, যে তাকে খুব সহজেই তার হারানো মেয়ের স্নেহ, মমতা দিয়ে নিমেষে আপন করে নিলো। স্রাবস্তি আবিষ্কার করল তাকে, বাবার সাথে জানল ভারতবর্ষকে। কোন বিশাল সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের ধারক বাহক সে। এক গভীর উপলব্ধি নিয়ে ফিরে গেল ইংল্যান্ডে।
দেখা গল্পটির মধ্যে নতুনত্ব নেই। অত্যন্ত আটপৌরেগল্প, predictable গল্প। অনেক সময় মনে হয়েছে ভারতীয়ত্বের ধারণা জোর করে আরোপ করা হয়েছে, পাশ্চাত্যের ভোগবাদীতার অসাড়তা লেখার মধ্যে বারংবার এসেছে। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে কোথাও যেন দেশভক্তির অতিরিক্ত মাত্রা, স্বামী বিবেকানন্দর আদর্শ জানাবার হ্যান্ডবুক। তবে এই ফিলিংটা তাদেরই হবে যারা বিষয়গুলো সম্বন্ধে অবহিত। পাঠকদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়গুলিতে অপরিচিত। অত্যন্ত সুখপাঠ্য এই বই। মূল্যবোধের চরম সংকটের দিনে এই বইটির প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
তোমাকে বইটা অনেক পরিণত, হয়ত বিষয়টা কিছুটা অ্যাডাল্ট। প্রথম পাঠে মনে হতে পারে বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভোর বৃষ্টির’ মতো লাগবে। কিন্তু কাহিনি কিছুটা অগ্রসর হলেই বোধটা বদলে যায়। পরকীয়া সম্পর্ক decriminalized হওয়ার পরে এই গল্পের গুরুত্ব অনেক বর্ধিত। দুজন পরিণত বয়স্ক মানুষ, নারী ও পুরুষ, দুজনেই বিবাহিত, দুজনেরই সংসার আছে। ঘোর সংসারী। তা সত্যেও তারা আকৃষ্ট হয় একে অপরের প্রতি। গল্প বলা পত্র মাধ্যমে, দু’জনের স্বীকারোক্তি – সেখানে ঠিক-ভুল, নৈতিক-অনৈতিক নিয়ে টানাপড়েন নেই। ঘটনার আকস্মিকতায়, মুহূর্তের মাহাত্ম্য, অপরের জীবনে ব্যাঘাত না হেনে দুটি মানুষের প্রেম এবং যেভাবে এই দুই ব্যক্তি তাদের ভালবাসায় শ্রদ্ধাশীল, বাংলা উপন্যাসে বিরল। Monogamy র myth কে লেখক যেভাবে ভেঙেছেন তার জন্য সাহস লাগে। অভিনন্দন অনিরুদ্ধ বাবুকে এত বলিষ্ঠ, controversial বিষয় উপন্যাসের subject বাছার জন্য।
-by Prof Sunettra Mitra | 07-Oct-2018
Media
Comments