Bahurupe Narmada by Ashis Kumar Chatterjee

Bahurupe Narmada
by Ashis Kumar Chatterjee
Travelogue, Bengali
Hardbound, 440 Pages, 765 gms
About: bahurupe, narmada, asis, chatterjee, bengali, travelogue
“নর্মদা সরিতাং শ্রেষ্ঠা রুদ্রতেজাৎ বিনিসৃতা। তারয়েৎ সর্বভূতানি স্থাবরাণি চরাণি চ।।”
অর্থাৎ, নর্মদা নদীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা। তিনি রুদ্র অর্থাৎ শিবের তেজ থেকে উৎপন্না। তিনি স্থাবর-জঙ্গম সর্বভূতকে উদ্ধার করেন, অর্থাৎ মুক্তি দেন।
হিন্দুধর্মে যে সাতটি নদীকে সবচেয়ে পবিত্র মান্য করা হয় (গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু ও কাবেরী), তার মধ্যে শুধুমাত্র নর্মদাকেই পরিক্রমা করা হয়।
নর্মদা পরিক্রমা করার অর্থ নর্মদাকে (সাধারণ ভাবে) সর্বদা ডাইনে রেখে একটা পুরো চক্কর খাওয়া। সেটা যে উৎস অর্থাৎ অমরকণ্টক থেকেই শুরু করতে হবে, তা কিন্তু নয়। যে কোনো জায়গা থেকে শুরু করে পুরো নর্মদাকে ঘুরে আবার সেই স্টার্টিং পয়েন্টে ফিরতে হবে। এর মধ্যে কোথাও কোনও কারনেই নর্মদাকে ক্রস করা যাবে না।
নানা ধরণের নর্মদা পরিক্রমার কথা বলা আছে -- রুণ্ডা, অর্ধ জলে-হরি, পূর্ণ বা ডবল জলে-হরি, পঞ্চক্রোশী ইত্যাদি।
নর্মদা পরিক্রমা অত্যন্ত কঠিন। ঠিক নিয়ম মেনে করতে গেলে পায়ে হেঁটে (এর মধ্যে বর্ষাকালে তিন বা চারমাস হাঁটা বন্ধ থাকবে) তিনবছর তিনমাস তের দিন সময় লাগে। নর্মদা পরিক্রমা কোনও লং ডিসট্যান্স রেস নয় যে যেন তেন প্রকারেণ নর্মদাকে একটা পাক খেয়ে ৮১৫x২ = ১৬৩০ মাইল ঘুরে এলাম।
খালি পায়ে নিঃসম্বল অবস্থায় (টাকাপয়সা ছাড়া এবং একবেলার বেশি খাদ্য সঙ্গে রাখা যাবে না) হেঁটে যেতে হবে নিরন্তর “রেবা” “রেবা” জপ করতে করতে। তার সঙ্গে পথে যত মন্দির (প্রায় সবই শিবমন্দির) ও তীর্থ পড়বে সবগুলিতে সঠিক নিয়মানুসারে পূজা দিতে দিতে ভিক্ষা করে খেতে খেতে এই পরিক্রমা করার বিধান। নর্মদা পরিক্রমা হিন্দুদের সবচেয়ে কঠিন ও কষ্টকর তীর্থযাত্রা। বলা হয় যে এটি একটি সম্পূর্ণ তপস্যা।
আজকাল নর্মদা পরিক্রমার মত কঠিন তীর্থযাত্রাকেও “মেড ইজি” করার নানা চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ কেউ সুপার আল্ট্রা-ম্যারাথনের মত ছ’মাসে করছেন বা করার চেষ্টা করছেন, কেউ বা ইনস্টলমেন্টে করছেন। আবার কেউ বা পায়ে না হেঁটে বাহনে করছেন। আগে রাজা-মহারাজারা নাকি পালকি অথবা ঘোড়া বা গরুর গাড়িতে এই পরিক্রমা করতেন। এরই আধুনিকতম রূপ হচ্ছে গাড়িতে নর্মদা পরিক্রমা করা।
আমি গত ৯ নভেম্বর ২০১৯থেকে ২৭ নভেম্বর ২০১৯ গাড়িতে করে এই পরিক্রমাটি করেছিলাম। সেই পরিক্রমা করার পর তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভব নিয়ে লেখা এই বইটি। তার সঙ্গে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি নর্মদা ও তার বিভিন্ন উপনদী, বিভিন্ন ঘাট, নর্মদা পরিক্রমা পথের বিভিন্ন জায়গা, রাস্তা, তীর্থস্থান, মন্দির, পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল এবং সবার উপরে মানুষজনের ইতিহাস, ভূগোল, ভূতত্ত্ব, জল-বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, পৌরাণিক কাহিনী এবং দর্শন নিয়ে আলোচনা করতে, যাতে বইটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় ভ্রমণকাহিনী না হয়ে নর্মদা পরিক্রমার একটি সম্পূর্ণ আধুনিক গাইড হয়ে ওঠে। কতটা পেরেছি, তার বিচার পাঠকই করবেন।
কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, এই এতটা দূরত্ব ট্রেনে গাড়িতে হেঁটে ঘুরে কী পেলে? এক কথায় উত্তরটা দেওয়া কঠিন।
একটা খোঁজে গিয়েছিলাম। কী পেলাম, তা এত তাড়াতাড়ি বোঝা সম্ভব নয়। যা পেলাম, তার কিছুটা বলা যায়, কিছুটা অনুভবের, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট এই তিনটি প্রদেশের বহু বহু জায়গা দেখলাম, বহু নদনদী জঙ্গল পাহাড় শহর গ্রাম ক্ষেত মন্দির দেবালয় দেবমূর্তি দেখলাম। সবার চেয়ে বেশি দেখলাম বহু রকমের মানুষজন। মানুষের মধ্যে নীচ মনোভাবের অসুরকে দেখলাম, ভণ্ডামির চূড়ান্ত দেখলাম। আবার সেই মানুষের মধ্যেই দেবতাকে প্রত্যক্ষ করলাম।
আর কিছুটা হলেও চিনলাম ভারতবর্ষের চিরন্তন আত্মাকে।
একটি নদীর চারপাশে ঘুরে এলেই আমার পাপক্ষয় হয়ে পূণ্যের ঘড়া উপচে পড়বে, এ বিশ্বাস আগেও ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু ইণ্ডিয়া নয়, চিরন্তন ভারতবর্ষকে দেখে এলাম। আর অনুভব করলাম নিজের ক্ষুদ্রত্ব। এ যদি পূণ্য হয়, তবে তাই আমার পূণ্য।
আমার সহযাত্রী যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই উনিশ দিন সবাই একটা পরিবারের মত একসাথে ছিলাম। অভিজ্ঞতা এক হলেও অনুভব নিশ্চয়ই সব সময় এক হয়নি। তাই এই বইটি পড়তে গিয়ে সব সময় একমত নাও হতে পারেন। মনে রাখবেন, লেখকের অনুভব আর সহযাত্রীদের অনুভব আলাদা হতেই পারে।
পরম পূজনীয় অবিচল মহারাজের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। মা নর্মদার অসীম কৃপায় আমি ও রকম একজন বেদজ্ঞ কর্মযোগী সন্ন্যাসীর সঙ্গে এই কঠিন পরিক্রমাটি নির্বিঘ্নে করতে পেরেছি। কোনও ধন্যবাদই ওঁর জন্য যথেষ্ট নয়।
যাঁরা সাপোর্ট স্টাফ ছিলেন, সেই অসিত বিশ্বাস, দিলীপ সিকদার, অনিমেষ তেওয়ারী, আশিস তেওয়ারী, লালু প্রসাদ এবং আমাদের চারজন ড্রাইভার মোহনলাল, চন্দ্রভান সিং চৌহান, চন্দ্রশেখর ও সঞ্জয়, এঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা কখনও ভুলবো না।
মা নর্মদা সবার মঙ্গল করুন।
“ভূতানি রেবা ভুবনানি রেবা। স্ত্রিয়ঃ পশবঃ নরাশ্চাপি রেবা।।
যৎ যৎ দৃশ্যতে খলু সৈব রেবা। রেবাস্বরূপাদ্ অপরং ন কিঞ্চিৎ।।”
দুর্গাপুর, এপ্রিল, ২০২০ আশিস কুমার চট্টোপাধ্যায়
Publications of Ashis Kumar Chatterjee:
Reviews
Bahurupe Narmada Launch
-by You Tube | 24-Aug-2020
Comments